নিজের ছাদকে বাগানে পরিণত করার কিছু উপায়।
বাগান আধুনিক ব্যস্ত নগর জীবনে এনে দিতে পারে প্রশান্তির ছোঁয়া। ছাদবাগান বাড়ির টপ ফ্লোরকে তুলনামুলক শীতল রাখে। দূষণমুক্ত রাখে পরিবেশ। পাশাপাশি জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ছাদবাগানের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
ছাদে বাগান করার সময় যেসব বিষয় খেয়াল রাখা দরকার
প্রয়োজনীয় উপকরণ
ছাদ বাগানের ফসল:
সবজি: টমেটো, বেগুন, ফুলকপি, ব্রোকলি, লাউ, করলা, মসলা, মিষ্টিকুমড়া, সীম, কলমীশাক, বরবটি, ডাঁটা, লালশাক, পুঁইশাক, মুলা ইত্যাদি।
ফল: লেবু, পেয়ারা, আম, ফুল ইত্যাদি।
ফুল: গোলাপ, চন্দ্রমল্লিকা, গাঁদা, বেলী, ডালিয়া, রজনীগন্ধা, মৌসুমী ফুল ইত্যাদি।
মসলা: মরিচ, ধনেপাতা, পুদিনা ইত্যাদি।
ছাদ বাগান কিভাবে করবেন ?
ইচ্ছে করলেই শহরবাসী ফলের বাগান বা সবজি বাগান করতে জমি পান না। তাই বিকল্প উপায় বের করে আবাদি জমি নষ্ট না করে ছাদকে কাজে লাগিয়ে বাগান করা যায়। ছাদে বাগান করতে হলে প্রতিদিন সকাল-বিকাল গাছে পানি দিতে হবে। গাছের গোড়ায় যাতে পানি না জমে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এছাড়া মাটির ধরণ জেনে বাগান করলে ছাদে যেকোন ধরনের গাছই জন্মানো সম্ভব।
ছাদ বাগানের জন্য পাত্র নির্বাচন: ছাদ বাগানের জন্য বড় মাটির টব ভাল। যদি ছাদ ভার সইতে পারে তবে কংক্রিটের বা সিরামিকের পাত্র তৈরি করে নেয়া যায়। না হলে প্লাস্টিকের টব, ট্রে বা ড্রাম নিতে পারেন। খালি টিনের বাক্স, কাঠের পেটি বাক্স, পুরনো পানির পাত্র ইত্যাদিও গাছ লাগানোর জন্য ব্যবহার করতে পারেন। তবে যে পাত্রই নেবেন, দেখবেন তাতে পানি নিকাশের জন্য ছিদ্র আছে কিনা। মাঝারি গাছ বিশেষ করে ফলের গাছ ও লতানো গাছ লাগানোর জন্য হাফ ড্রাম বা বড় পাত্র নেবেন। ফুলগাছ ও ছোট গাছ লাগানোর জন্য ছোট পাত্র নেবেন। শাক বা সবজি লাগানোর জন্য কাঠ বা জিআই পাত দিয়ে তৈরি করা ট্রে ব্যবহার করতে পারেন। মাটি, সিরামিক, সিমেন্ট, প্লাস্টিক ইত্যাদি পাত্র ফল ও ফুলগাছ লাগানোর জন্য নিতে পারেন। ফল গাছের জন্য টিন বা প্লাস্টিকের বড় ড্রাম হলে ভাল হয়। ফুলগাছ লাগানোর জন্য ২৫ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার মুখের মাটি বা সিমেন্টের টব হলে ভাল।
ছাদ বাগানের মাটি: ছাদ বাগানোর জন্য মাটি একটি গুরুত্বর্পূণ বিষয়। শাক ও অগভীরমূলী ফুলগাছ লাগানোর জন্য ১৫ থেকে ২০ সেন্টিমিটার পুরু মাটির স্তর থাকলেই চলে। কিন্তু মাঝারি ও যেসব গাছের শিকড় বড় হয় সেসব গাছ লাগানোর জন্য মাটির গভীরতা কমপক্ষে ৫০ সেন্টিমিটার হতে হবে। দোঁআশ মাটি হলে সবচেয়ে ভাল হয়। এই মাটির সাথে ২:১ অনুপাতে মাটি ও জৈব সার আলাদা করে মিশিয়ে কয়েক দিন পলিথিন দিয়ে ঢেকে রেখে দেবেন। যদি রাসায়নিক সার মেশানোরও দরকার হয় তাহলে তা সার মাটি তৈরির সময় মিশিয়ে দেবেন।
টব বা ড্রামের মাটি বদলানো: প্রতি বছর না হলেও ১ বছর পরপর টবের পুরাতন মাটি পরিবর্তন করে নতুন গোবর মিশ্রিত মাটি দিয়ে পুনরায় টব বা ড্রাম ভরে দিতে হবে। এ সময় খেয়াল রাখতে হবে গাছ যেন বেশি ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। যতদুর সম্ভব গোড়ার মাটি তুলে কিছু নতুন সার মাটি দিতে হবে।
বালাই ব্যবস্থাপনা
বালাই দমনে পরিবেশ বান্ধব আইপিএম পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া রাসায়নিক বালাইনাশক ব্যবহার না করে জৈব রাসায়নিক বালাইনাশক যেমন- নিমবিসিডিন, বাইকাও-১ ব্যবহার করা যেতে পারে। পেয়ারা, কুল, লেবু, আম, করমচা, জলপাই, বেগুন প্রভূতি গাছে ছাতরা পোকার আক্রমন হতে পারে। এ পোকার আক্রমন হলে পাতার নিচে সাদা তুলার মত দেখা যায়, এসব পোকা উড়তে পারে না। গাছ দূর্বল হয়ে পড়ে, পাতা লাল হয়ে যায়, পাতা ও ফল ঝরে পড়ে, ফলের আকার বিকৃত হয়ে যায়। এ ছাড়া পেয়ারা, লেবু, জলপাই, বেগুন প্রভূতি গাছে সাদা মাছির আক্রমন দেখা যায়। হাত বাছাইয়ের মাধ্যমে পোকা দমন করতে হবে। প্রয়োজনে জৈব বালাইনাশক ‘বাইকাও’ ও সাবান পানি প্রয়োগ করতে হবে। প্রতি লিটার পানিতে ৩ থেকে ৪ গ্রাম ডিটারজেন্ট পাউডার মিশিয়ে পাতার নিচে স্প্রে করলে ভাল ফল পাওয়া যায়। ছাদের বাগান পরিচ্ছন্ন রাখলে ও নিয়মিত গাছ ছাঁটাই করলে পোকা ও রোগের আক্রমন অনেক কম হয়।
ছাদে বাগান করার কিছু সহজ ও সাধারণ পদ্ধতি
বর্তমানে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে বাড়ির ছাদে বাগান করা বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। অধিকাংশ বাড়ির ছাদের দিকে তাকালেই বিভিন্ন ধরনের বাগান দেখা যায়। শখ করে আমাদের দেশে ছাদে বাগান করার প্রথা শুরু হলেও এখন রীতিমত অর্থনৈতিক খাত হিসেবে চিহ্নিত। অনেকেই আছে যারা বাড়ির ছাদে বাগান করে পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রি করে।