সূরা আল-বাকারা

সূরা আল-বাকারা

সূরা আল-বাকারা- অর্থসমূহের অনুবাদ (আয়াত ২ থেকে ৫০) 

(২:২) এই সেই কিতাব যাতে  কোনই সন্দেহ নেই, মুত্তাকীদের জন্য হেদায়েত

(২:৩) যারা গায়েবের প্রতি ঈমান আনে, সালাত কায়েম করে এবং তাদেরকে আমরা যা দান করেছি তা থেকে ব্যয় করে

(২:৪)আর যারা ঈমান আনে তাতে যা আপনার উপর নাযিল করা হয়েছে এবং যা আপনার পূর্বে নাযিল করা হয়েছে, আর যারা আখেরাতে নিশ্চিত বিশ্বাসী

(২:৫)তারাই তাদের রবের নির্দেশিত হিদায়াতের উপর রয়েছে এবং তারাই সফলকাম

(২:৬) যারা কুফরী করেছে আপনি তাদেরকে সতর্ক করুন বা না করুন , তারা ঈমান আনবে না

(২:৭)আল্লাহ্ তাদের হৃদয়সমূহ ও তাদের শ্রবণশক্তির উপর মোহর করে দিয়েছেন, এবং তাদের দৃষ্টির উপর রয়েছে আবরণ। আর তাদের জন্য রয়েছে মহাশাস্তি।

(২:৮)  আর মানুষের মধ্যে এমন লোকও রয়েছে যারা বলে, আমরা আল্লাহ্ ও শেষ দিবসে ঈমান এনেছি, অথচ তারা মুমিন নয়।

(২:৯) আল্লাহ্ এবং মুমিনদেরকে তারা প্রতারিত করে। বস্তুতঃ তারা নিজেদেরকেই নিজেরা প্রতারিত করছে, অথচ তারা তা বুঝে না

(২:১০) তাদের অন্তরসমূহে রয়েছে ব্যাধি। অতঃপর আল্লাহ্ তাদের ব্যধি আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন। আর তাদের জন্য রয়েছে কষ্টদায়ক শাস্তি, কারণ তারা মিথ্যাবাদী।

(২:১১) আর যখন তাদেরকে বলা হয়, তোমরা যমীনে ফাসাদ সৃষ্টি করো না, তারা বলে, আমরা তো কেবল সংশোধনকারী।

(২:১২) সাবধান ! এরাই ফাসাদ সৃষ্টিকারী, কিন্তু তারা তা বুঝে না

(২:১৩) আর যখন তাদেরকে বলা হয়,তোমরা ঈমান আন যেমন লোকেরা ঈমান এনেছে,তারা বলে নির্বোধ লোকেরা যেরূপ ঈমান এনেছে আমরাও কি সেরুপ ঈমান আনবো সাবধান! নিশ্চয় এরা নির্বোধ, কিন্তু তারা তা জানে না।

(২:১৪) আর যখন তারা মুমিনদের সাথে সাক্ষাত করে,তখন বলে,আমরা ঈমান এনেছি,আর যখন তারা একান্তে তাদের শয়তানদের সাথেএকত্রিত হয়,তখন বলে,নিশ্চয় আমরা তোমাদের সাথে আছি। আমরা তো কেবল উপহাসকারী।

(২:১৫) আল্লাহ্ তাদের সাথে উপহাস করেন, এবং তাদেরকে তাদের অবাধ্যতার মধ্যে বিভ্রান্তের মত ঘুরে বেড়াবার অবকাশ দেন।

(২:১৬) এরাই তারা, যারা হেদায়াতের বিনিময়ে ভ্রষ্টতা কিনেছে। কাজেই তাদের ব্যবসা লাভজনক হয়নি। আর তারা হেদায়াতপ্রাপ্তও নয়।

(২:১৭) তাদের উপমা, ঐ ব্যক্তির ন্যায়, যে আগুন জ্বালালো, তারপর যখন আগুন তার চারদিক আলোকিত করল, আল্লাহ্ তখন তাদের আলো নিয়ে গেলেন এবং তাদেরকে ঘোর অন্দকারে ফেলে দিলেন, যাতে তারা কিছুই দেখতে পায় না।

(২:১৮) তারা বধির, বোবা, অন্ধ, কাজেই তারা ফিরে আসবে না।

(২:১৯) কিংবা আকাশ হতে মুষলধারে বৃষ্টির ন্যায়,যাতে রয়েছে ঘোর অন্ধকার, বজ্রধ্বনিও বিদ্যুৎচমক।বজ্রধ্বনিতে মৃত্যুভয়ে তারা তাদের কানে আঙ্গুল দেয়। আর আল্লাহ্ কাফেরদেরকে পরিবেষ্টন করে রয়েছেন।

(২:২০) বিদ্যুৎ চমকে তাদের দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নেয়ার উপক্রম হয়। যখনই বিদ্যুতালোক তাদের সামনে উদ্ভাসিত হয় তখনই তারা পথ চলে এবং  যখন অন্ধকারে ঢেকে যায় তখন তারা থম্‌কে দাঁড়ায়। আল্লাহ্ ইচ্ছে করলে তাদের শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তি হরণ করতে পারেন। নিশ্চয় আল্লাহ্ সবকিছুর উপর  ক্ষমতাবান।

(২:২১) হে মানুষ ! তোমরা তোমাদের সেই রবের ইবাদাত করো যিনি তোমাদেরকে এবং তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাকওয়া অধিকারী হও।

(২:২২)যিনি যমীনকে তোমাদের জন্য বিছানা ও আসমানকে করেছেন ছাদ এবং আকাশ হতে পানি অবতীর্ণ করে তা দ্বারা তোমাদের। জীবিকার জন্য ফলমূল উৎপাদন করেছেন। কাজেই তোমরা জেনে-শুনে কাউকে আল্লাহ্র সমকক্ষ দাঁড় করিও না।

(২:২৩) আর আমরা আমাদের বান্দার প্রতি যা নাযিল করেছি তাতে তোমাদের কোনো সন্দেহ থাকলে তোমরা এর অনুরুপ কোনো সূরা আনয়ন কর এবং আল্লাহ্ ব্যতীত তোমাদের সকল সাক্ষী-সাহায্যকারীকে আহ্বান কর, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।

(২:২৪) অতএব,যদি তোমরা তা করতে না পারো আর কখনই তা করতে পারবে না,তাহলে তোমরা সে আগুন থেকে বাঁচার ব্যবস্থা করো,যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর,যা প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে কাফেরদের জন্য।

(২:২৫)আর যারা ঈমান এনেছে এবং সৎ কাজ করেছে তাদেরকে শুভ সংবাদ দিন যে,তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত,যার তলদেশে নদী প্রবাহিত।যখনই তাদেরকে ফলমুল খেতে দেয়া হবে,তখনই তারা বলবে আমাদেরকে পূর্বে জীবিকা হিসেবে যা দেয়া হত এতো তাই।আর তাদেরকে তা দেয়া হবে সাদৃশ্যপূর্ণ করেই এবং সেখনে তাদের জন্য রয়েছে পবিত্র সঈিনী।তারা সেখানে স্থায়ী হবে

(২:২৬) নিশ্চয় আল্লাহ্ মশা কিংবা তার চেয়েও ক্ষুদ্র কোনো বস্তুর উপমা দিতে সংকোচ বোধ করেন না।যারা ঈমান এনেছে তারা জানে যে,নিশ্চয়ই এটা তাদের রবের পক্ষ হতে সত্য। কিন্তু যারা কুফরী করেছে তারা বলে যে, আল্লাহ্ কী উদ্দেশে এ উপমা পেশ করছেন? এর দ্বারা অনেককেই তিনি বিভ্রান্ত করেন, আবার বহু লোককে হিদায়াত করেন। 

আর তিনি ফাসিকদের ছাড়া আর কাউকে এর দ্বারা বিভ্রান্ত করেন না

(২:২৭) যারা আল্লাহ্র সাথে দৃঢ় অঙ্গীকারে আবদ্ধ হওয়ার পর ভঙ্গ করে, আর যে সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ রাখতে আল্লাহ্ আদেশ করেছেন তা ছিন্ন করে এবং যমীনের উপর ফাসাদ সৃষ্টি করে বেড়ায়, তারাই ক্ষতিগ্রস্ত।

(২:২৮) তোমরা কিভাবে আল্লাহ্র সাথে কুফরি করছ ? অথচ তোমরা ছিলে প্রাণহীন, অতঃপর তিনি তোমাদেরকে জীবিত করেছেন। তারপর তিনি তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন ও পুনরায় জীবিত করবেন, তারপর তারই দিকে তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেয়া হবে।

(২:২৯)তিনিই যমীনে যা আছে সব তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন।তারপর তিনি আসমানের প্রতি মনোনিবেশ করে সেটাকে সাত আসমানে বিন্যস্ত করেছেন,তিনি সবকিছু সম্পর্কে সবিশেষ অবগত।

(২:৩০)আর স্মরণ করুন,যখন আপনার রব ফেরেশতাদের বললেন নিশ্চয় আমি যমীনে খলীফা সৃষ্টি করছি,তারা বলল,আপনি কি সেখানে এমন কাওকে সৃষ্টি করবেন যে ফাসাদ ঘটাবে ও রক্তপাত করবে? আর আমরা আপনার হামদসহ তাসবীহ পাঠ করি এবং পবিত্রতা ঘোষণা করি। তিনি বলেন নিশ্চয়ই আমি তা জানি, যা তোমরা জান না

(২:৩১) আর তিনি আদমকে যাবতীয় নাম শিক্ষা দিলেন তারপর সেগুলো ফেরেশ্‌তাদের সামনে উপস্থাপন করে বললেন এগুলোর নাম আমাকে বলে দাও, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।

(২:৩২)তারা বলল,আপনি পবিত্র মহান! আপনি আমাদেরকে যা শিক্ষা দিয়েছেন তা ছাড়া আমাদের তো কোনো জ্ঞানই নেই। নিশ্চয় আপনিই সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়

(২:৩৩)তিনি বললেন,হে আদম!তাদেরকে এসবের নাম বলে দিন। অতঃপর তিনি (আদম) তাদেরকে সেসবের নাম বলে দিলে তিনি (আল্লাহ্) বললেন,আমি কি তোমাদের কে বলিনি যে, নিশ্চয় আমি আসমান ও যমীনের গায়েব জানি। আরও জানি যা তোমরা ব্যক্ত কর এবং যা তোমরা গোপন করতে

(২:৩৪)আর স্মরণ করুন, যখন আমরা ফেরেশতাদের বললাম, আমাকে সিজদা কর,তখন ইবলিশ ছাড়া সকলেই সিজদা করল; সে অস্বীকার করল ও অহংকার করল। আর সে কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত হল

(২:৩৫)আর আমি আদমকে বললাম,হে আদম ! আপনি ও আপনার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস করুন এবং যেখান থেকে ইচ্ছা স্বাচ্ছন্দ্যে আহার করুন, কিন্তু এই গাছটির কাছে যাবেন না তাহলে আপনারা হবেন যালিমদের অন্তর্ভুক্ত

(২:৩৬) অতঃপর শয়তান সেখান থেকে তাদের পদস্খলন ঘটালো এবং তারা যেখানে ছিলো সেখান থেকে তাদেরকে বের করলো। আর আমরা বললাম, তোমরা একে অন্যের শ্ত্রু রুপে নেমে যাও এবং কিছু দিনের জন্য তোমাদের বসবাস ও জীবিকা রইল যমীনে।

(২:৩৭)তারপর আদম তার রবের কাছ থেকে কিছু বাণী পেলেন। অতঃপর আল্লাহ্ তার তাওবা কবুল করলেন। নিশ্চয় তিনিই তাওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু।

(২:৩৮)আমি হুকুম দিলাম তোমরা সকলে এখান থেকে নেমে যাও।অতঃপর যখন আমার পক্ষ থেকে তোমাদের নিকট কোনো হিদায়াত আসবে তখন যারা আমার হিদায়াত অনুসরণ করবে,তাদের কোনো ভয় নেই

(২:৩৯)আর যারা কুফরী করেছে এবং আমাদের আয়াতসমূহে মিথ্যারোপ করেছে তারাই আগুনের অধিবাসী, সেখানে তারা স্থায়ী হবে

(২:৪০)হে বানী-ইসরাঈল বংশধরগণ !তোমারা আমার সে নিয়ামতের কথা স্মরণ করো যা আমি তোমাদেরকে দিয়েছি এবং  আমার সঙ্গে তোমাদের অঙ্গীকার পূর্ণ করো আমিও তোমাদের সঙ্গে আমার অঙ্গীকার পূর্ণ করবো। আর তোমরা শুধু আমাকেই ভয় কর।

(২:৪১)আর আমি যা নাযিল করেছি তোমরা তাতে ঈমান আনো। এটা তোমাদের কাছে যা আছে তার সততা প্রমাণকারী। আর তোমরাই এর প্রথম অস্বীকারকারী হয়ো না  এবং আমার আয়াতসমূহের বিনিময়ে তুচ্ছ মূল্য গ্রহন করো না। আর তোমরা শুধু আমারই তাকওয়া অবলম্বন কর।

(২:৪২)আর তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশ্রিত করো না এবং জেনে বুঝে সত্যকে গোপন করো না।

(২:৪৩) আর তোমরা সালাত প্রতিষ্ঠা করো ও যাকাত দাও এবং রুকূ’কারীদের সাথে রুকূ করো

(২:৪৪)তোমরা কি মানুষ কে সৎকাজের নির্দেশ দাও, আর নিজেদের কথা ভুলে যাও! অথচ তোমরা কিতাব অধ্যয়ন করো। তবে কি তোমরা বুঝ না ?

(২:৪৫) আর তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো। আর নিশ্চয় তা বিনয়ীরা ছাড়া অন্যদের উপর কঠিন।

(২:৪৬) যারা বিশ্বাস করে যে, নিশ্চয় তাদের রবের সাথে তাদের সাক্ষাত ঘটবে এবং নিশ্চয় তারা তাঁরই দিকে ফিরে যাবে

(২:৪৭)হে ইসরাঈল বংশধরগণ ! আমার সে নিআমতের কথা স্মরণ করো যা আমি তোমাদেরকে দিয়েছিলাম। আর নিশ্চয় আমি সমগ্র সৃষ্টিকুলের উপর তোমাদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছিলাম

(২:৪৮)আর তোমরা সে দিনের তাকওয়া অবলম্বন করো যেদিন কেউ কার কোনো কাজে আসবে না। আর কারও সুপারিশ গ্রহণ করা হবে না   এবং কারো কাছ থেকে বিনিময় গৃহীত হবে না। আর তারা সাহায্যও প্রাপ্ত হবে না

(২:৪৯)আর স্মরণ কর, যখন আমরা ফির’আউনের বংশ হতে তোমাদেরকে নিষ্কৃতি দিয়েছিলাম, তারা তোমাদের কে মর্মান্তিক শাস্তি দিতো।

 (২:৪৯) তোমাদের পুত্রদের যবেহ করে ও তোমাদের নারীদের বাঁচিয়ে রাখতো। আর এতে ছিলো তোমাদের রব এর পক্ষ হতে এক মহা পরীক্ষা

(২:৫০)আর স্মরণ করো, যখন আমরা তোমাদের জন্য সাগরকে বিভক্ত করেছিলাম এবং তোমাদের কে উদ্ধার করেছিলাম ও ফির’আউনের বংশকে নিমজ্জিত করেছিলাম। আর তোমরা তা দেখছিলে।